শুরুতেই শেষ হতে চলেছে তৃণমূলের ‘অভিযান’! অন্তত বর্তমান পরিস্থিতি সেরকমই বার্তা দিচ্ছে। ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেসে সংকট আরও তীব্রতর। এবার তৃণমূল ভবন থেকেই সরিয়ে নেওয়া হল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত, ব্যানার ও কাটআউট। খুলে ফেলা হল সাইনবোর্ড। তাহলে ত্রিপুরা তৃণমূল কি সত্যিই বিজেপি-র পথে? রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মমতার ছবি সরিয়ে তৃণমূলের ছয় বিধায়ক বিজেপিতে যোগদানের পথে আরও একধাপ এগলেন!
কেন হঠাৎ করেই তৃণমূল ভবন থেকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন উত্তরে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় তৃণমূল কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম এই সিদ্ধান্ত বিবেচনা করার জন্য। চিঠি লিখেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু আমরা কোনও উত্তর পাইনি। তাই আমরাও সম্পর্ক ছিন্ন করার উত্তর দিলাম।’ এই ছবি সরানোর সিদ্ধান্ত কি তবে আপনাদের বিজেপিতে যোগদানের দ্বিতীয় পদক্ষেপ? সুদীপবাবু বলেন, ‘আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি বিজেপিতে যোগ দেব কি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরিয়ে আমরা তাঁকে স্রেফ বার্তা দিতে চাইলাম যে, আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত মেনেই আমরাও এই সিদ্ধান্ত নিলাম।’
তিনি জানান, ‘এই মাসের মধ্যেই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। দলীয় বৈঠক ডেকে সর্বসম্মতভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- দল সম্পর্ক ছিন্ন করার পর ত্রিপুরার তৃণমূল কংগ্রেস কী করবে। আপাতত সমস্ত দরজাই খোলা রাখা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থীকে সমর্থনের অর্থ এই নয় যে, আমরা বিজেপিতেই যোগ দিতে চলেছি। আমরা রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন করেছি আদর্শগত কারণে।’ ত্রিপুরার রাজধানী শহর আগরতলায় ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর। ২০১৬-তে সুদীপ রায় বর্মন-সহ ছয় বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার পরই এই ভবন নির্মাণ হয়। বিধায়ক আশিস সাহার দেওয়া জমিতেই গড়ে ওঠে দলীয় কার্যালয়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় এই কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। সুদীপ রায় বর্মনদের দাবি, আমরা আশা করেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে তৃণমূলের হাত ধরে বাম শাসনের অবসান হয়েছে, ত্রিপুরাতেও একইভাবে বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে। কিন্তু তা এখন দুরুহ হয়ে উঠছে। তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয়ভাবে সিপিএম বিরোধিতার পথ থেকে বিচ্যুত। তাই আমরা বিকল্প ভাবনা করছি, এটা ঠিক। তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের এই বরফ জমাট হয়েছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ পদপ্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন করা নিয়ে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মীরা কুমারকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ত্রিপুরা তৃণমূল দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে রামনাথ কোবিন্দকেই সমর্থনের কথা জানায়। তাতেই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। শেষমেশ ভাঙনের পথ প্রশস্ত হয়।